'কোবরা ডান্সের' শুরুটা কিভাবে? জানালেন অপু
'কোবরা ডান্সের' শুরুটা কিভাবে? জানালেন অপু
উদযাপনটার আবিষ্কারক বাংলাদেশের স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপু। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) উইকেট শিকারের পর তার 'কোবরা ডান্স' নজর কেড়েছে সবার। শুরুটা তখন থেকেই। এরপর জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে সেই একই উদযাপন। তবে অপুর এই উদযাপন বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পেয়েছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ের নায়ক মুশফিকের সুবাদে। ম্যাচজয়ের নায়ক সেদিন বিস্ফোরিত চোখে, শরীর বাকিয়ে দিয়েছিলেন 'কোবরা ডান্স'। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় তোলে। ভাইরাল হতে সময় নেয়নি মুশফিকের এই 'কোবরা ডান্স।'
এরপর ফাইনালে যাওয়ার ম্যাচে নানা নাটকীয়তার পর মাহমুদুল্লাহর ছক্কায় আবারো লঙ্কা বধের পর পুরো দল ক্রিজে গিয়ে এই 'কোবরা ডান্স' দেন। উদযাপনের এই ছবি এবং ভিডিও এখন ভাইরাল।
বাংলাদেশের এই উদযাপন এতোটাই আলোচিত হয়েছে যে, প্রতিপক্ষ শিবিরেও চলে সেই উদযাপন! যা আশ্চর্য হওয়ার মতো।
কোবরা ডান্সের আবিষ্কার করেন নাজমুল ইসলাম অপু
শ্রীলঙ্কা যখন বাংলাদেশ সফরে আসে। উইকেট শিকারের পর নাজমুল ইসলাম অপু তার সিগনেচার স্টেপ 'কোবরা ডান্স' দেন। হাত দুটি মাথায় তুলে ছোবল দেন তিনি।
এই উদযাপনের কারণটা খুব মজার। এক সাক্ষাৎকারে অপু জানান, ২০১৬ সালে রাজশাহীর হয়ে বিপিএলে খেলেন তিনি। সেই সময় দলের অধিনায়ক ক্যরারিবীয় ড্যারেন স্যামি তাকে বলেন, 'স্পিনাররা হলো সাপের মতো।'
এই কথাই মনে ধরে অপুর। ভাবেন, আসলেই তো, আমি যখন অ্যাটাক করি, ব্যাটসম্যান আউট হন।
সেই থেকে 'ছোবল' মারা এই উদযাপনের শুরু অপুর।
এরপর একদিন জাতীয় দলের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি মতুর্জার মেয়ে হুমায়রা তাকে বলেন, 'চাচ্চু তোমার এটা (কোবরা ডান্স) অনেক ভালো লাগে। তুমি যখন বল করতে আসো। আমি সবাইকে ছোবল দিতে থাকি যে, তুমি উইকেট নিবা।'
তখন অপু বুঝতে পারেন, তার 'কোবরা ডান্স' অনেকের ভালো লাগছে। তাই ভালো বোলিং করে উদযাপনটা বার বার করার তাগিদ অনুভব করেন। শ্রীলঙ্কা সফরে উদযাপনটা আরো আলোড়ন তোলে। যা প্রতিপক্ষ শিবিরে বিষ ছড়ায়। তারাও উইকেট শিকারের পর বাংলাদেশের এই উদযাপন 'নিজেদের' করে নেন। ছোবল দিতে থাকেন। ঢাকা টেস্টে জয়ের পর 'কোবরা ডান্স' দেন লঙ্কান বোলার।
যার শোধ তাদের মাটিতে গিয়ে দিয়ে আসেন মুশফিকুর রহিম। তবে একটু অন্যভাবে। মুশফিক ভিন্নতা আনেন এই 'কোবরা ডান্সে'। নিদাহস ট্রফিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে জয়সূচক রানটি করেই বিস্ফোরণ ঘটান তিনি। ব্যাট মাটিতে রেখে চোখে আগুন ঝরিয়ে, হাত দুটি মাথায় তুলে, শরীর বাঁকিয়ে দেন 'কোবরা ডান্স'! যা ক্রিকেটবিশ্বে ঝড় তোলে। বাংলাদেশের উদযাপনে পরিণত হয় এই 'কোবরা ডান্স।'
এরপর ফাইনালে উঠার ম্যাচে আবার মুখোমুখি শ্রীলঙ্কার সাথে। জিতলেই ফাইনালে। সেই ম্যাচে উত্তেজনার জেরে গ্যালারিতে থাকা লঙ্কানরা ক্ষণে ক্ষণে দিতে থাকেন 'কোবরা ডান্স'। উদযাপনটা যে বাংলাদেশের- সেটা হয়ত ভুলেই গিয়েছিলেন তারা!
সেদিন মাহমুদুল্লাহ ছক্কা হাঁকিয়ে ফাইনালে পৌঁছে দিয়ে আরো একবার 'কোবরা ডান্স' করার সুযোগ দিয়ে দেন। নো বল কাণ্ডের কারণে সেদিন টাইগারদের উদযাপনটা আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে। পুরো মাঠ জুড়ে চলে এই 'কোবরা ডান্স'। তাতে যোগ দেন বাংলাদেশ দলে ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজনও। এই ছোবলের বিষেই ছটফট করছিল লঙ্কানরা।
ফাইনালে তাই ভারতের পক্ষ নিয়ে গ্যালারিতে চলে 'কোবরা ডান্স'। অপু সেই ছোবলের শোধ নেয় উইকেট শিকার করে 'কোবরা ডান্স' দিয়ে।
তবে সেদিন সবচেয়ে আশ্চর্য হওয়ার মতো ঘটনা ঘটিয়েছেন ভারতের সাবেক ক্রিকেটার সুনীল গাভাস্কার। ধারাভাষ্য রুমে তিনি ভারতের ব্যাটিংয়ের সময় 'কোবরা ডান্স' দিতে থাকেন। ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচারের কারণে দেখেছে সারাবিশ্ব।
তার এই আচরণে ক্ষুদ্ধ হয়েছে বাংলাদেশের ভক্ত সমর্থকরা। প্রশ্ন তুলেছেন, ভারতের একজন কিংবদন্তিতুল্য ক্রিকেটার হয়ে তিনি কিভাবে এমন আচরণ করলেন?
নেটিজেনরা তুলোধুনো করেছেন তাকে। টুইটার ব্যবহারকারী একজন বলেছেন, ধারাভাষ্যকক্ষে বসে এমন আচরণ সুনীল গাভাস্কারের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
আরেকজন লিখেছেন, 'নিলজ্জর' মানে #সুনীল গাভাস্কার।
আরেক টুইটার ব্যবহারকারী বলেছেন, 'ধারাভাষ্যকক্ষে বসে যেভাবে তিনি নেচেছেন, তা খুবই হাস্যকর...তিনি ভারতবাসীকে লজ্জায় ডুবিয়েছেন।'
এই ঘটনায় ধিক্কার জানিয়েছেন অনেকে। আরেকজন বলেছেন, ''এই 'কোবরা ডান্সের' জন্য আইসিসির কি আপনাকে নিষিদ্ধ করা উচিত নয়?''
তবে এই সব ঘটনায় একটি ব্যাপার নিশ্চিত, বাংলাদেশের এই উদযাপন এখন পুরো ক্রিকেটবিশ্বের উদযাপনে পরিণত হয়েছে।
